কিভাবে বাজারের সেরা ল্যাপটপ নিজে নিজেই খুঁজে বের করবেন।

 



ল্যাপটপের প্রাইস বর্তমান সময়ে অনেক বেড়েছে। বাজেট অনুযায়ী বেস্ট ল্যাপটপ খুঁজে বের করা আমাদের সবার ক্ষেত্র সহজ নয়। বাজেট অনুযায়ী বাজারের সেরা ল্যাপটপটি খুঁজে বের করতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে।


ল্যাপটপের কাজ: সর্বপ্রথম আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ল্যাপটপ এর মাধ্যমে আপনি কী কাজ করবেন। কাজের উপরে ল্যাপটপ বাজেট নির্ভর করবে। 


বাজেট: আপনার বাজেট যদি ৪০ হাজার টাকার আশেপাশে হয় তাহলে আমার পরামর্শ হলো ল্যাপটপ না কিনে একটা ডেস্কটপ পিসি তৈরি করে নিবেন। অনেক ভালো পারফম্যান্স পাবেন। আর যদি ল্যাপটপই লাগে অর্থাৎ বাইরে নিয়ে ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে বাজেট একটু বাড়াতে হবে।


প্রসেসর: ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রসেসরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রসেসর যদি ভাল ব্রান্ডের পাশাপাশি আপডেটেড হয় তাহলে ল্যাপটপের পারফরমেন্স ভালো হবে। ভালো ব্রান্ড বলতে Intel এবং AMD বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। প্রসেসরের এর ক্ষেত্রে দুইটি বেসিক বিষয় রয়েছে যা আমরা সবাই জানি যেমন: কোর ( core i3, i5, i7) এবং জেনারেশন ( 1st,....9th, 10th, 11th)

এরপর প্রশ্ন হল, কেমন কাজ করবেন

আপনি যদি হালকা কাজ করতে চান যেমন নেট ব্রাউজিং, অফিস এপ্লিকেশন, ভিডিও দেখা এবং বাজেট যদি ৪৫ হাজার থেকে ৬০ হাজারের মধ্যে হয় তাহলে আপনি i3 এর সবচেয়ে লেটেস্ট জেনারেশন এর একটি ল্যাপটপ সিলেট করতে পারেন। বর্তমানে 11th জেনারেশন চলছে। আপনি যখন ল্যাপটপ কিনবেন তখন সবচেয়ে লেটেস্ট যে জেনারেশন থাকবে সেটি সিলেক্ট করা আপনার জন্য বেটার অপশন হবে। তবে ইন্টেল প্রসেসরের ক্ষেত্রে দুইটা জেনারেশন কনসিডার করা যায়। যেমন যদি লেটেস্ট জেনারেশন 11th থাকে তাহলে আপনি 10th, 9th জেনারেশন পর্যন্ত নামতে পারেন। আর AMD প্রসেসর এর ক্ষেত্রে সবথেকে লেটেস্ট যেটা থাকবে সেটিই সিলেক্ট করার চেষ্টা করবেন।


আর ল্যাপটপের মাধ্যমে হালকা ভিডিও গেম, ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন এই ধরনের কাজ করতে চান তাহলে আপনার জন্য i5 অথবা i7 এর লেটেস্ট জেনারেশনের প্রসেসর সিলেট করা প্রয়োজন। i5 এর ল্যাপটপগুলো ৫৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার প্রাইস এর মধ্যে পাবেন। প্রাইস রেঞ্জ একটু কম বেশি হতে পারে। কোর i7 এর ল্যাপটপ গুলো নিতে হলে ৭০ হাজার এর বেশি প্রাইস এর প্রয়োজন হবে। কিছু কিছু ব্রান্ডের প্রাইস আবার একটু কম রয়েছে।


র‍্যাম: প্রসেসরের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি রয়েছে সেটি হচ্ছে র‍্যাম। আপনি যদি হালকা টুকিটাকি কাজ করতে চান যেমন মাইক্রোসফট অফিস, মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট, মাইক্রোসফট এক্সেল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি তাহলে আপনি সর্বনিম্ন ৪ জিবি র‍্যাম সিলেক্ট করতে পারেন। ৪ জিবির নিচে কোন র‍্যাম সিলেক্ট করবেন না। বর্তমান সময়ে সফটওয়্যার গুলো অনেক বেশি র‍্যাম দখল করে। আবার সব সময় র‍্যাম বেশি থাকলেই পারফরম্যান্স ভালো হবে এমন নয়। র‍্যাম দুই ধরনের হয়ে থাকে প্রথমত DDR4 দ্বিতীয়ত LPDDR4। LPDDR4 থেকে DDR4 এর পারফমেন্স বেশি। DDR4 এর র‍্যাম সিলেক্ট করার পরামর্শ রইলো। 


র‍্যাম সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে আরও একটি ব্যাপারে লক্ষ্য করা প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে বাস স্পিড। ৩২০০ বাস মেগা হার্জ স্পিডের নিচে র‍্যাম সিলেট না করাই বেটার।


SSD: SSD নাকি HSD কোনটি বেটার? আমার পরামর্শ থাকবে SSD ছাড়া কোন ল্যাপটপ সিলেক্ট করবেন না। যদি বাজেট কম থাকে তাহলে এমন একটি ল্যাপটপ চয়েজ করবেন যেটির M.2 পোর্ট রয়েছে। কারণ এই পোর্টের মাধ্যমে একটি SSD ল্যাপটপে লাগিয়ে নিতে পারবেন। বর্তমান সময়ে HSD যুক্ত ল্যাপটপ কিছুদিন পর এত স্লো হয়ে যায়, যেটা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। তাই SSD যুক্ত ল্যাপটপ সিলেক্ট করার পরামর্শ থাকবে। 


আবার কিছু কিছু কম বাজেটের ল্যাপটপে HSD এবং ডিভিডি রাইডার থাকে। বর্তমান সময়ে ডিভিডি রাইটারের ব্যবহার কমে গিয়েছে। তাই ডিভিডি রাইটারের জায়গায় HSD এবং HSD জায়গায় SSD সেট করে নতুন করে উইন্ডোজ দিয়ে ল্যাপটপটি ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ল্যাপটপের পারফরমেন্স অনেক অনেক বৃদ্ধি পাবে।


সাইজ: ১৪ ইঞ্চি নাকি ১৫ ইঞ্চি নাকি তার থেকে বেশি? একটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার পছন্দের উপর। আপনি যদি অনেক বেশি বাইরে বাইরে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি ১৪ ইঞ্চি এর একটি ল্যাপটপ চয়েজ করতে পারেন। আর আপনি যদি একটু বড় ডিসপ্লেতে কমফোর্টেবল ফিল করেন তাহলে ১৫ ইঞ্চি সাইজের ডিসপ্লে সিলেক্ট করবেন।


ডিসপ্লে: বিভিন্ন ধরনের ডিসপ্লে রয়েছে যেমন LCD, LED ও OLED ইত্যাদি। এলসিডি ডিসপ্লে যুক্ত ল্যাপটপের বাজেট কম। ধারণা করে যদি বলি তাহলে ৩৫ থেকে ৫৫ হাজার এর ল্যাপটপ গুলো সাধারণত এলসিডি ডিসপ্লে যুক্ত হয়ে থাকে। আবার ৫৫ থেকে ৭৫+ হাজার পর্যন্ত ল্যাপটপগুলো এলইডি ডিসপ্লে যুক্ত হয়ে থাকে। ৮০ হাজার থেকে উপরের ল্যাপটপগুলো ওএলইডি ডিসপ্লে যুক্ত হয়ে থাকে। প্রাইস রেঞ্জ অবশ্যই কমবেশি হতে পারে। ডিসপ্লের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রেজুলেশন। যত বেশি রেজুলেশন এর ডিসপ্লে হবে ততবেশি ক্লিয়ার হবে। তাই আপনার বাজেট যদি ৮০ হাজার বা তার থেকে বেশি হয় তাহলে আপনি অবশ্যই ওএলইডি যুক্ত 2k অথবা 3k এর উপর একটি ডিসপ্লে সিলেক্ট করবেন।


গ্রাফিক্স কার্ড: সাধারণত গ্রাফিক্স কার্ড দুই ধরনের হয়ে থাকে ।

প্রথমত ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড 

দ্বিতীয়ত ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড।

ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড ল্যাপটপের প্রসেসরের সাথে বিল্ডিং ভাবে সেট করা থাকে। এই ল্যাপটপগুলোর প্রাইস কম হয়। এই ল্যাপটপ গুলো দিয়ে হালকা পাতলা এডিটিং যেমন: মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট, মাইক্রোসফট এক্সেল এবং ফটোশপের আগের ভার্সন গুলো খুব সুন্দর করে সাপোর্ট করে। 


ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপগুলোর প্রাইস রেঞ্জ একটু বেশি। আপনাদের প্রাইস যদি একটু বেশি হয় তাহলে আপনারা অবশ্যই ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত একটি ল্যাপটপ চুজ করতে পারেন। এই ল্যাপটপগুলো দিয়ে হালকা ভিডিও গেম এবং ভিডিও এডিটিং করতে পারবেন। তবে হাই রেজুলেশনের ভিডিও গেম গুলো ল্যাগ করতে পারে।


ব্যাটারি: দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমান সময়ে ল্যাপটপগুলোর ব্যাটারি ব্যাকআপ সন্তোষজনক নয়। ব্র্যান্ডগুলো যত ঘন্টা দাবি করবে আপনারা সেখান থেকে ৩ ঘন্টা কম হিসাব করবেন। তবে সব ব্রান্ডের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। যেমন: এপল যা দাবি করে তা ঠিক থাকে। সচারচার ব্যাটারি গুলা ২ সেল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আপনাদের যদি ব্যাটারি ব্যাকআপ একটু বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে ৪ সেল অথবা ৬ সেল এর ব্যাটারি চয়েজ করতে পারেন।


ব্রান্ড: অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ল্যাপটপের ব্র্যান্ড আগে থেকে চয়েজ করা থাকে। কারো একজনের ক্ষেত্রে ভালো সাপোর্ট দিয়েছে বলে আপনার ক্ষেত্রে ভালো সাপোর্ট দিবে এমন নয়। এইজন্য ব্রান্ড কখনোই বেস্ট অপশন হতে পারে না। 


তাই ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রোডাক্টকে প্রাধান্য দিয়ে সব দিক বিবেচনা করে ভালো একটি ল্যাপটপ সিলেক্ট করার পরামর্শ রইলো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url