নতুন মোবাইল কেনার আগে যা জানা প্রয়োজন - Things You should know before buying a new mobile phone
একটি নতুন স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন সেই সকল বিষয় নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করব। বর্তমান সময়ে একটি স্মার্ট ফোন ব্যতীত দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে না এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেহেতু যাবতীয় সকল কর্মকান্ড যেমন: বিদ্যুৎ বিল, ওয়াসা বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেট বিল ইত্যাদি ছোট ছোট কাজকর্ম মোবাইলের মাধ্যমে করা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। তাই যে সকল ব্যক্তিদের কাছে একটি স্মার্টফোন নাই তাদের নিকট একটি স্মার্ট ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় নতুন ফোন কেনার ক্ষেত্রে আমরা কোন কিছু না দেখে দোকানদারের উপর নির্ভর করে স্মার্ট ফোন ক্রয় করে ফেলি। পরবর্তীতে এমন সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যেগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যেমন মনে করেন, ফোন গরম হয়ে যাওয়া, অল্প সময়ে চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া, মোবাইল হ্যাং হয়ে যাওয়া আরো কত কিছু। তাই নতুন মোবাইল কেনার আগে ছোট ছোট কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখলে অল্প বাজেটের মধ্যেও একটি ভালো মোবাইল ফোন ক্রয় করা সম্ভব।
এই আর্টিকেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই সেটি হচ্ছে প্রসেসর।
মোবাইল ফোনের প্রসেসর যেভাবে সিলেক্ট করবেন:
মোবাইল ফোনের ব্র্যান্ডের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রসেসর এর ভিন্নতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্কেটে অনেক অনেক প্রসেসর রয়েছে।
স্নাপ ড্রাগন: একেবারেই সংক্ষেপে যদি বলতে বলেন তাহলেই যে প্রসেসরটির নাম সবার আগে মনে পড়ে যায় সেটি হচ্ছে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর। এই প্রসেসরটির রিভিউ এখনো পর্যন্ত অনেক ভালো বলে রিভিউ করে যাচ্ছেন প্রযুক্তি প্রেমীরা। তাই একটি নতুন ফোন কেনার ক্ষেত্রে যদি ফোনটির প্রসেসর স্ন্যাপড্রাগনের হয় তাহলে ফোনটির পারফরমেন্স ভালো পাবেন বলে আশা করা যায়। শুধু স্ন্যাপড্রাগনের প্রসেসর হলেই যে পারফরম্যান্স ভালো হবে এমনটা নয়। স্ন্যাপড্রাগনের পাশাপাশি এমন কিছু কম্বিনেশনের প্রয়োজন হয়, যেগুলোর মাধ্যমে একটি স্মার্টফোনের পারফরম্যান্স ভালো হয়।
একটি ভালো কম্বিনেশন কিভাবে খুজে পাবেন সেই আলোচনা এই আর্টিকেলে সংক্ষেপে বর্ণনা করার চেষ্টা করব।
মিডিয়াটেক: মিডিয়াটেকের প্রসেসর বিশিষ্ট মোবাইলের সংখ্যা অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত মিডিয়াটেকের প্রসেসর বিশিষ্ট স্মার্টফোনগুলোর প্রাইস একটু কম হয় স্ন্যাপড্রাগনের প্রসেসর বিশিষ্ট মোবাইল থেকে। তাই প্রাইসের দিক থেকে স্ন্যাপড্রাগনের প্রসেসর বিশিষ্ট একটি স্মার্টফোনকে সিলেক্ট করা না গেলে মিডিয়াটেকের লেটেস্ট ভার্সন এর একটি প্রসেসর সিলেক্ট করবেন। খুব বেশি খোঁজাখুঁজি করতে না চাইলে এই দুটি প্রসেসর এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি সিলেক্ট করলে আশা করি ফোনটির পারফরম্যান্স ভালো পাবেন।
নতুন মোবাইলের র্যাম যেভাবে সিলেক্ট করবেন:
সফটওয়্যার গুলো যত বেশি আপডেট হচ্ছে তত বেশি র্যাম এর প্রয়োজন হচ্ছে। সাধারণত যে সফটওয়্যার গুলো খুব বেশি ব্যবহার করা হয় সেই সফটওয়্যার গুলো বেশি অনেক বেশি র্যাম ইউজ করছে। যেমন ফেসবুক, গুগল ক্রোম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। তাই আপনার বাজেট যতই কম হোক ৪ জিবি র্যাম এর নিচে কোন স্মার্টফোন সিলেক্ট করবেন না। ৬ জিবি র্যাম বা তার থেকে বেশি র্যাম বিশিষ্ট একটি স্মার্টফোন সিলেক্ট করার চেষ্টা করবেন।
র্যাম বেশি হলেই যে স্মার্টফোনের পারফরমেন্স ভালো হয়ে যাবে এমনটা মনে করা ঠিক নয়। অনেক সময় র্যাম বেশি হয়েও পারফরম্যান্স খারাপ হয়। র্যাম এর বিভিন্ন ধরনের ভার্সন রয়েছে। LPDDR4X এর নিচে কোন র্যাম সিলেট করা ঠিক নয়। DDR4 এর র্যাম হলে সব থেকে ভালো হয়। বাজেট অল্প হলে LPDDR4 র্যাম বিশিষ্ট একটি ফোন সিলেক্ট করতে পারেন। তবে DDR4 ভার্সনের একটি র্যাম সিলেক্ট করার পরামর্শ রইল।
স্মার্ট ফোনের রম কত জিবি হওয়া উচিৎ:
এখনকার সময়ে মেমোরি কার্ড অর্থাৎ এসডি কার্ড এর প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। কারণ মেমোরি কার্ড স্মার্টফোনের ভিতরে ইনসার্ট করলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এটাক করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘদিন একটি মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার ফলে ভেতরের ফাইলগুলো ক্রপ্টেড হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে মেমোরি কার্ড ফরমেট দিতে হয়। ফরম্যাট হয়ে গেলে মূল্যবান অনেক ফাইল হারিয়ে যায়। তাই স্মার্টফোনে মেমোরি কার্ড ব্যবহার না করার পরামর্শ রইলো।
যেহেতু মেমোরি কার্ডের দিন শেষ হয়েছে তাই এমন একটি স্মার্ট ফোন সিলেট করা উচিত যেটির স্টোরিজ একটু বেশি। বাজেই যতই কম হোক বর্তমান সময়ে ৬৪ জিবির নিচে রম বিশিষ্ট কোন মোবাইল ফোন সিলেক্ট করা উচিৎ নয়। ১২৮ জিবি বা তার বেশি রম বিশিষ্ট একটি স্মার্ট ফোন সিলেক্ট করার পরামর্শ রইলো।
স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম:
মোবাইল ফোনের অপারেটিং সিস্টেম বা ইউজার ইন্টারফেস কেমন হলে ভালো হয় সেটি বর্ণনা করার চেষ্টা করব এই অংশতে। OneUI অপারেটিং সিস্টেম বিশিষ্ট মোবাইল এর পারফরম্যান্স অন্যান্য গুলোর থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকে। সাধারণত samsung মোবাইল গুলোর অপারেটিং সিস্টেম এ এটি দেখা যায়। যেহেতু samsung মোবাইল গুলোর প্রাইস একটু বেশি হয় তাই অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করতে চাই। oxygen OS নামে আরও একটি অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। এই অপারেটিং সিস্টেমটি ওয়ান প্লাস ব্র্যান্ডের মোবাইলে দেখা যায়। এটির পারফরম্যান্স ও সুন্দর তবে অনেক ব্যয়বহুল। এরপর শাওমি কোম্পানির ইউজার ইন্টারফেস MIUI এর পারফমেন্স নিয়ে কিছু না বললেই নয়। ৩ জিবি বা ৪ জিবি র্যাম বিশিষ্ট ফোনগুলোতে শাওমির ইউজার ইন্টারফেস অনেক স্লো কাজ করে। ৬ জিবি বা ৮ জিবি র্যাম বিশিষ্ট মোবাইল ফোনে শাওমি ব্র্যান্ডের MIUI এর পারফরম্যান্স অনেক বেটার বলে মনে হয় আমার কাছে। তাই শাওমি মোবাইল কিনলে ৬ জিবি র্যাম বিশিষ্ট একটি মোবাইল সিলেক্ট করার চেষ্টা করবেন। এরপর রিয়েলমি ব্রান্ডের ইউজার ইন্টারফেস দেখতে পারেন। এটি পারফরমেন্স খারাপ নয়।
আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরা যেমন হলে ভালো হয়: মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে সবথেকে যে বিষয়টি বেশি লক্ষ্য করা হয় সেটি হচ্ছে ক্যামেরা। ফোন কেনার ক্ষেত্রে যেটি সবথেকে বেশি দেখা যায় সেটি হচ্ছে ক্যামেরা। তাই ফোন কিনতে যাওয়ার আগে যে মডেলটি কিনতে চান সেই মডেলের ক্যামেরা সেন্সর যদি sony ব্র্যান্ডের হয় তাহলে ক্যামেরাটির পারফরম্যান্স ভালো হবে বলে আশা করা যায়। কারণ সনি ব্র্যান্ডের ক্যামেরা সেন্সর এখনও পর্যন্ত ভালো পারফরমেন্স করে যাচ্ছে। আপনি যদি আপনার মোবাইলের ক্যামেরার জন্য একটি ভালো ব্রান্ডের সেন্সর সিলেক্ট করে ফেলতে পারেন তাহলে তারপরে আপনাকে খুঁজতে হবে অ্যাপাচার ভ্যালু। আপনার মোবাইলের ক্যামেরার অ্যাপাচার ভ্যালু যত বেশি কম হবে ক্যামেরার পারফরম্যান্স তত বেশি ভালো হবে। তাই অ্যাপাচার ভ্যালু কম দেখে ক্যামেরা সিলেক্ট করার পরামর্শ রইলো। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে রিভিউ দেখতে পারেন। মোবাইলের ক্যামেরার সংখ্যা বেশি হলেই ক্যামেরা ভালো হবে এমনটি নয়। ভালো সেন্সর বিশিষ্ট দুটি ক্যামেরাই যথেষ্ট।
স্মার্ট ফোনের ডিসপ্লে যেভাবে সিলেক্ট করবেন:
বাজেট একটু ভালো হলে ৬০হার্জ/৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট বিশিষ্ট সুপার এমোলেড ডিসপ্লে বিশিষ্ট একটি স্মার্ট ফোন সিলেক্ট করবেন। রিফ্রেশ রেট না থাকলেও সুপার এমোলেড ডিসপ্লে বেটার হবে। আর যদি বাজেট কম হয় তাহলে IPS ডিসপ্লে বিশিষ্ট একটি ফোন সিলেক্ট করবেন। তবে সুপার এমোলেড সিলেক্ট করার পরামর্শ রইলো। এবার আসি রেজুলেশনের এর আলোচনায়। FHD রেজুলেশনের একটি ডিসপ্লে সিলেক্ট করার চেষ্টা করবেন। HD রেজুলেশন বিশিষ্ট ডিসপ্লের মোবাইল খারাপ নয়। তবে FHD হলে সব থেকে ভালো হয়।
ব্যাটারি যেমন দেখে ফোন সিলেক্ট করবেন:
ব্যাটারি সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করবেন যেন ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার এর কম না হয়। পাশাপাশি ১৮ ওয়াট বিশিষ্ট ফার্স্ট চার্জিং এর একটি চার্জার হতেই হবে। তার থেকে কম ওয়াটের চার্জার সিলেক্ট না করার পরামর্শ রইলো। USB type C বিশিষ্ট চার্জিং পোর্ট দেখে নিবেন।
সফটওয়্যার আপডেট সিস্টেম দেখে নেওয়া:
মোবাইল টি যদি এমন হয় যে এন্ড্রয়েড ভার্সন আপডেট হওয়ার সাথে সাথে আপডেট হয়ে যায়। থাহলে অনেক সুবিধা হয় ইউজার এর জন্য। তাই আপডেট সিস্টেম দেখে স্মার্ট ফোন সিলেক্ট করলে পারফর্মেন্স ভালো পাবেন।
পরিশেষে আসি বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে:
মোবাইল টি যদি শক্ত হয় তাহলে অনেকদিন যাবৎ ব্যবহার করা সম্ভব হয়। তার পাশাপাশি যদি স্লিম হয়, কালারটি মনোমুগ্ধকর হয় দেখতে সুন্দর হয় এবং অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।