5G প্রযুক্তি বলতে কি বুঝায়? এই প্রযুক্তির গতি কেমন হবে? পাশাপাশি 5G এর মাধ্যমে কি কি সুবিধা পেতে যাচ্ছে আগামীর প্রজন্ম।
5G বলতে কি বুঝায়? 5G এর মাধ্যমে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। সেই সম্পর্কে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করব আজকের এই আর্টিকেলে।
5G সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য:
5G = পঞ্চম জেনারেশন। এর আগে আমরা প্রথম জেনারেশন(1G), দ্বিতীয় জেনারেশন(2G), তৃতীয় জেনারেশন(3G), চতুর্থ জেনারেশন(4G) এর নাম শুনেছি। এটি হচ্ছে দ্রুতগতি সম্পন্ন ও তারবিহীন একটি নেটওয়ার্ক টেকনোলজি।
বাংলাদেশে 5g নেটওয়ার্ক কবে সম্পূর্ণরুপে কার্যকর হতে পারে?
পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২জি নেটওয়ার্ক গ্লোবালি ১৯৯১ সালে চালু হয় এবং বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে মোটামুটিভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়। থ্রিজি নেটওয়ার্ক গ্লোবালি ১৯৯৮ সালে ব্যবহৃত হয় এবং বাংলাদেশে ২০১২ সাল থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়। ফোরজি নেটওয়ার্ক গ্লোবালি ২০০৮ সালে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে ২০১৮ সালে কিছু কিছু জায়গায় এভেলেবেল করা হয়। প্রায় ১০ বছর লেগে যায় 4G নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এভেলেবেল করতে। উপরের পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায় 5G নেটওয়ার্ক বর্তমানে চালু করা হলেও সব জায়গায় এভেলেবেল করতে আরো কিছু বছর প্রয়োজন হতে পারে। 5G নেটওয়ার্ক গ্লোবালি ব্যবহার হওয়া শুরু হয়েছে 2020 সালে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল গুলোতে 5G নেটওয়ার্ক এর কাভারেজ পৌঁছাতে মিনিমাম ২-৩ বছর সময় লেগে যেতে পারে।
5G এর গতি কেমন হবে?
গতির ক্ষেত্রে আমরা যদি 4g এর সাথে তুলনা করি তাহলে সহজে বলতে পারি 4g থেকে প্রায় ৪০-১০০ গুণ বেশি স্পিড পাওয়া যাবে 5G নেটওয়ার্কে। ফাইভ-জি স্পিড বুঝতে হলে ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে কিছুটা আইডিয়া রাখা প্রয়োজন। সংক্ষেপে 5G ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
5G ফ্রিকোয়েন্সি: ৫জি ফ্রিকুয়েন্সি সাধারণত দুই ধরনের হয়। যেমন:
প্রথমত Sub-6 GHz
দ্বিতীয়ত mmWave।
Sub-6 GHz: এই প্রকারের ফ্রিকোয়েন্সিতে ডাটা স্পিড 6 গিগাহার্টজ থেকে কম। পাশাপাশি Low / Mid লেভেল এর Band থাকে এই প্রকারের ফ্রিকোয়েন্সিতে।
mmWave: এই প্রকারের ফ্রিকোয়েন্সিতে ডাটা স্পিড থাকে ২২ থেকে ২৬ গিগাহার্জের মধ্যে। মিলিমিটার ওয়েবের ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যান্ড ইউজ করা হয়েছে।
সহজ ভাষায় যদি বলি তাহলে Sub-6 GHz frequency তে নেটওয়ার্ক ব্যান্ডগুলো কিছুটা দূরে থাকে এবং নেটওয়ার্কের স্পিড ধীরগতি সম্পন্ন হয়। একটা চিকন পাইপ থেকে পানি প্রবাহের সাথে তুলনা করা যায়। পাশাপাশি mmWave ফ্রিকোয়েন্সিতে নেটওয়ার্কের ডিভাইস গুলা খুব কাছাকাছি রাখতে হয় এবং ডাটা স্পিড অনেক অনেক বেশি থাকে। একটি মোটা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহের সাথে তুলনা করা যায়। তবে বাংলাদেশে যে ফাইভ-জি টেকনোলজি আসতেছে সেটি Sub 6 গেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে রয়েছে।
5G সার্ভিস পেতে হলে যা যা প্রয়োজন:
মিনিমাম তিনটি রিকোয়ারমেন্ট থাকলে আপনি 5g সার্ভিসটি পেতে পারেন।
১। কাভারেজ এরিয়া,
২। ৫জি চিপ বিশিষ্ট মোবাইল ফোন এবং
৩। ৫জি সাপোর্টেড সিম কার্ড
১। 5G কাভারেজ এরিয়া: অর্থাৎ আপনি যে এরিয়াতে থেকে 5G সার্ভিস পেতে চাচ্ছেন সেই এরিয়াতে 5G কাভারেজ যদি না থাকে তাহলে সার্ভিসটি পাওয়া সম্ভব নয়। পরবর্তীতে যখন মোবাইল সিম অপারেটর কোম্পানিগুলো আপনার কাঙ্খিত এলাকাতে 5G কাভারেজ সম্পন্ন করবে তখন 5G সার্ভিস গ্রহণ করতে পারবেন।
২। ৫জি চিপ বিশিষ্ট মোবাইল ফোন: সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোন ৫জি সাপোর্ট করে না। কিছু কিছু মোবাইল ফোনে ৫জি সাপোর্ট করে। যে সকল সেটের মধ্যে 5g চিপ বসাতে থাকে সে সকল ফোন ৫জি সাপোর্ট করে। তাই আপনার এরিয়াতে যদি 5g কাভারেজ থাকে তাহলে আপনি একটি 5g চিপ বিশিষ্ট মোবাইল ফোন ক্রয় করতে পারেন।
৩। 5G সাপোর্টেড সিম কার্ড: আপনার সিম কার্ডটি যদি অনেক আগে ক্রয় করা থাকে তাহলে ফাইভ-জি সাপোর্ট পেতে হলে সিম কার্ডটি কাস্টমার কেয়ার থেকে পরিবর্তন করে আদা লাগতে পারে। যেহেতু 3g থেকে 4g তে কনভার্ট করার জন্য অনেকের সিম কার্ড পরিবর্তন করতে হয়েছে তাই এক্ষেত্রেও একই রকম হবে বলে আশা করছি।
উপরের তিনটি বিষয় যদি এভেইল্যাবল থাকে তাহলে আপনি 5g সার্ভিসটি ইউজ করতে পারবেন।
5G নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
যেহেতু 5g একটি উচ্চগতি সম্পন্ন নেটওয়ার্কিং সিস্টেম। এটির মাধ্যমে অনেক অনেক সুবিধা পাবে আগামীর বিশ্ব। অল্প কিছু উদাহরণের মাধ্যমে আমরা 5G সম্পর্কে কিছুটা আইডিয়া নিতে পারব।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে 5g এর সুবিধা: বর্তমান সময়ে বিভিন্ন রোগের অপারেশন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। মাঝেমাঝে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এবং সার্জন (ডাক্তার) একই জায়গায় থাকা সম্ভব হয় না। যেহেতু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের সংখ্যা সব জায়গায় এভেইল্যাবল নয়। তাই দূরে থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস দিয়ে অস্ত্রপাচার অর্থাৎ অপারেশন করা হয়। এক্ষেত্রে যদি ইন্টারনেট স্পিড অনেক বেশি না হয় তাহলে অস্ত্রপাচার ভুল হয়ে যেতে পারে। ফাইভ-জি টেকনোলজি এই ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ৫জি এর দ্রুতগতির জন্য দূরে থেকেও ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে অস্ত্রপাচার সম্পন্ন করা সম্ভব।
গার্মেন্টস সেক্টর এ 5g এর সুবিধা: বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস সেক্টর এখন অনেকটা উর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে। এই গার্মেন্টস সেক্টর কে আরো আরও ঊর্ধ্বমুখী করা সম্ভব হবে 5g টেকনোলজির মাধ্যমে। গার্মেন্টস সেক্টরে যে ধরনের মেশিন ইউজ করা হয় সেই মেশিনগুলো অধিকাংশই ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে অনেক বড় একটা জনবল শুধু গার্মেন্টস সেক্টরে ইউজ হয়। এই সেক্টরে যদি মেশিনগুলো অটোমেটেড সিস্টেমের আওতাভুক্ত করা যায় তাহলে গার্মেন্টস সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সম্ভব হবে। তাই ৫জি নেটওয়ার্কের আওতায় গার্মেন্টস গুলোর মেশিনগুলোকে স্বয়ংক্রিয় করে অনেক বেশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
কৃষি ক্ষেত্রে 5g এর সুবিধা: যদিও ফোরজি এর মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে ৬০% কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও ৫জি টেকনোলজির উচ্চ গতি ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস সংযোজন করা সম্ভব। যেমন সেন্সর ও উচ্চগতির ড্রোন ইউজ করে কোন একজন কৃষিবিদ সঠিকভাবে দূর দূরান্তের জমিতে সার প্রয়োগ করতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে যদি পোকামাকড় আক্রমণ করে তাহলে ড্রোন ব্যবহার করে সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করে বিষ প্রয়োগে ফসলকে পোকামুক্ত করা সম্ভব।
চালক বিহীন যানবাহনের ক্ষেত্রে ৫জি এর সুবিধা: চালক বিহীন যানবাহনের ক্ষেত্রে ওয়ারলেস ডিভাইস ইউজ করে দূরে বসে যানবাহন টিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এক্ষেত্রে যদি ইন্টারনেট এর স্পিড কম হয় তাহলে অতি সহজেই দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যে মুহূর্তে গতি কমাতে হবে ঠিক সেই মুহূর্তেই কার্যকরী করা সম্ভব না হলে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই ৫জি এর মাধ্যমে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ইউজ করে দূরে বসে ওয়ারলেসের মাধ্যমে চালকবিহীন যানবাহন গুলোকে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ফাইভ-জি প্রযুক্তির সুবিধা প্রকৃতপক্ষে একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আবারো কোন একদিন কোন এক আর্টিকেলে ৫ জি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। সবাই ভালো থাকবেন! সুস্থ থাকবেন! ধন্যবাদ!