ল্যাপটপের যত্ন নিবেন যেভাবে - How to take care your laptop



ল্যাপটপের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমরা একটি ল্যাপটপকে অনেকদিন যাবত ব্যবহার করতে পারি। একটা ল্যাপটপ আমাদেরকে অনেক কাজে সহায়তা করে। তাই আমাদের সকলের উচিত ল্যাপটপের যত্ন নেওয়া। সামান্য কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকার মাধ্যমে আমরা ল্যাপটপের যত্ন নিতে পারি। 


কিবোর্ড এর যত্ন যেভাবে নিবেন: 

ল্যাপটপ ক্রয় করার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই ল্যাপটপ এর কিবোর্ড এ সমস্যা দেখা যায়। কিবোর্ডের প্রতি যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমরা দীর্ঘদিন কিবোর্ড ভালো রাখতে পারি। আমাদের একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে ল্যাপটপের কিবোর্ড বেশি ইউজ করলে কিবোর্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আমরা একটি এক্সটার্নাল কিবোর্ড ক্রয় করে সেটি ইউজ করে থাকি। কিন্তু এটি সঠিক নয়। ল্যাপটপের কিবোর্ড সতর্কতার সহিত যত বেশি ব্যবহার করা যায় তত বেশি ভালো থাকে। 

অনেক বেশি ধূলাযুক্ত স্থানে ল্যাপটপ রেখে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এই ধুলা ল্যাপটপের কিবোর্ড এর উপরে জমতে শুরু করে। পরবর্তীতে এই ধূলাগুলো কিবোর্ডের কি এর ভেতর দিয়ে ল্যাপটপের ভিতরে যাওয়া শুরু করে। অনেক বেশি ধূলা জমে যাওয়ার মাধ্যমে ল্যাপটপের কিবোর্ড সমস্যা দেখা যেতে পারে। তাই আপনার ল্যাপটপকে ধূলাযুক্ত স্থান থেকে দূরে রাখুন। এর ফলে আপনি আপনার ল্যাপটপের কীবোর্ড কে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে পারবেন।


কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করা: 

অনেক সময় ল্যাপটপ নিয়ে আমাদের বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। বাইরে অনেক ধূলাবলি থাকার ফলে ল্যাপটপের কিবোর্ডে ধূলা লেগে যায়। আবার আমরা অনেকেই টেবিলের উপরে ল্যাপটপের পাশাপাশি চা অথবা কফি অথবা পানির গ্লাস রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার করি। অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে ধাক্কা লেগে চা বা পানি ল্যাপটপের উপরে পড়ে গেলে ল্যাপটপ টি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ল্যাপটপের কিবোর্ডকে ধূলা বা পানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য আমাদের কিবোর্ড প্রটেক্টর ইইউজ করা উচিৎ। এটির ভালো দিক খারাপ দিক দুটোই রয়েছে। ভালো দিক হচ্ছে ধূলা অথবা পানি থেকে আমরা আমাদের ল্যাপটপটিকে মুক্ত রাখতে পারি। আর খারাপ দিক হচ্ছে ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেম অর্থাৎ বায়ু চলাচল ব্যবস্থা বাধা প্রাপ্ত হতে পারে। তাই ল্যাপটপের পাশাপাশি চা বা পানি থাকার সম্ভাবনা না থাকলে সব থেকে ভালো হয় কিবোর্ড প্রটেক্টর ইউজ না করে সতর্কতার সহিত ল্যাপটপ ব্যবহার করা। 


ল্যাপটপের ব্যাটারির যত্ন যেভাবে নিবেন: 

মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে ল্যাপটপ ইউজ করা হয় না। পরীক্ষার সময় পড়ালেখার প্রতি অনেক বেশি সময় দেয়া হয়। এসময়ে আমাদের অনেকের ল্যাপটপ ব্যবহৃত হয়না। ফলে ল্যাপটপের ব্যাটারি ডাউন হয়ে যায়। তাই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত ১৫ দিনের বেশি ল্যাপটপ যেন বন্ধ না থাকে। 

ল্যাপটপের ব্যাটারির চার্জ একেবারে শেষ করা উচিত নয়। এতে ব্যাটারি ডাউন হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন ব্যাটারির চার্জ ২০% এর নিচে না যায়। ২০% এর নিচে নামার আগে ল্যাপটপ কে চার্জে দিন।

অনেক সময় আমরা ল্যাপটপকে চার্জে দিয়ে কাজ করতে থাকি। চার্জ ফুল হয়ে যাওয়ার পরেও আমরা চার্জার খুলে রাখতে ভুলে যাই।এটি ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ফুল চার্জ হওয়ার পর চার্জে রেখে ল্যাপটপ ইউজ করা উচিত নয়।

এক মাসের বেশি ল্যাপটপ বন্ধ রাখার প্রয়োজন হলে ল্যাপটপের ব্যাটারি চার্জ ৪০% থেকে ৬০% এর মাঝে রাখা উচিত। এক্ষেত্রে ফুল চার্জ অথবা চার্জহীন ভাবে ল্যাপটপ ফেলে রাখা ঠিক হবে না।

অনেক সময় আমরা সফটওয়্যার আপডেট হলে আপডেট দেই না। আপডেটেড সফটওয়্যার ইউজ করলে ব্যাটারি হিট কম হয় ফলে চার্জ কম খরচ হয়।


ল্যাপটপ আর্দ্রতাযুক্ত স্থানে না রাখা: 

অনেক সময় আর্দ্রতাযুক্ত স্থানে ল্যাপটপ রাখার কারণে ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক অথবা মাদারবোর্ড অথবা ram এ সমস্যা হতে পারে। তাই ল্যাপটপকে আর্দ্রতাযুক্ত স্থান থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। 


স্টোরেজ ফ্রী রাখা: 

অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ডাটা স্টোর করে আমরা আমাদের ল্যাপটপের স্টোরেজ ফুল করে রাখি। অপ্রয়োজনীয়, অব্যবহৃত ফাইল দীর্ঘদিন ধরে হার্ডডিক্সে থাকার কারণে ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক ডাউন হয়ে যায়। তাই অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করে ল্যাপটপে স্টোরেজ ফাঁকা রাখার চেষ্টা করতে হবে। ফলে ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক ভালো থাকে। আবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থাকার কারণে আমরা আমাদের হার্ডডিস্কে রাখা ফাইলগুলোকে ফেলে রাখি। দীর্ঘদিন ধরে ফাইলগুলো ওপেন না করার কারণে হার্ডডিস্ক ডাউন হয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে হার্ডডিক্স এর ফাইলগুলোকে ওপেন করে হার্ডডিস্ক এর স্পিড ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।


ভেন্টিলেটর বা বায়ু চলাচল ব্যবস্থা:

দীর্ঘ সময় ধরে ল্যাপটপ ব্যবহার করার ফলে ল্যাপটপটির তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন ল্যাপটপের ভেতরের কুলিং ফ্যান ভালোভাবে কাজ করতে পারে। ল্যাপটপ টিকে সোফার উপরে অথবা বেডের উপরে রেখে ব্যবহার করা ঠিক না কারণ এতে করে ল্যাপটপ এর কুলিং সিস্টেম অর্থাৎ বায়ু চলাচল ব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই ল্যাপটপটিকে টেবিলে বা সমান্তরাল কোন তলে রেখে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কিছু কিছু ল্যাপটপ দীর্ঘ দিন ব্যবহার করার কারণে কুলিং সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটি এক্সটার্নাল কুলিং সিস্টেম লাগিয়ে ল্যাপটপটি ব্যবহার করলে আরো কিছুদিন ভালোভাবে ব্যবহার করা যাবে।


স্ক্রিন পেপার ইউজ করা: 

ল্যাপটপের স্ক্রিনে অর্থাৎ ডিসপ্লেতে বিভিন্ন ধরনের স্ক্রাচ লেগে যেতে পারে। তাই স্ক্রিন পেপার লাগানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের ল্যাপটপের ডিসপ্লে স্ক্রিন নিরাপদে রাখতে পারি। 


সতর্কতার সাথে ল্যাপটপের পোর্ট ইউজ করা: 

ল্যাপটপে বিভিন্ন ধরনের পোর্ট থাকে। চার্জিং পোর্ট, ইউএসবি পোর্ট, এইচডিএমআই (HDMI) পোর্ট, অডিও জ্যাক পোর্ট, থান্ডারবোল্ট পোর্ট ইত্যাদি। অনেক সময় অসাবধানতার কারণে আমরা পোর্ট গুলো নষ্ট করে ফেলি। তাই এই পোর্ট গুলো সাবধানতার সাথে ইউজ করে ল্যাপটপ কে ভালো রাখতে পারি। 


এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা: 

অনেক কারণে আপনার ল্যাপটপ ভাইরাস দ্বারা এটাক হতে পারে। অফলাইনে ফাইল আদান প্রদানের মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপ এ ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। 

আবার অনলাইনে বিভিন্ন ক্রপটেড ফাইল অথবা সফটওয়্যার ডাউনলোড করার মাধ্যমে আপনার ল্যাপটপে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এর মধ্য কিছু কিছু ভাইরাস খুবই মারাত্বক। এগুলো ল্যাপটপের যাবতীয় ফাইল নষ্ট করে দেয়। তাই একটি ভালো প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। অনেক সময় পাবলিক ওয়াইফাই তে কানেক্ট করার কারণে আপনার ল্যাপটপ অনিরাপদ হয়ে যায়। হ্যাকাররা ইচ্ছা করলে আপনার সকল ফাইল এক্সেস করতে পারে। তাই আপনার ল্যাপটপ কে পাবলিক ওয়াইফাই থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন।


যদিও আরো অনেক বিষয় রয়েছে। তবুও উপরিউক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি ল্যাপটপ ইউজ করলে আশাকরি আপনার ল্যাপটপ টি দীর্ঘদিন ইউজ করতে পারবেন। আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ! 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url